নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির কারণে ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দায় চরম সংকটে পড়েছেন ওই অঞ্চলে থাকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রিসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এসব দেশে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মারাত্মকভাবে লোকসানের মুখে তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় অর্ধেকের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী লোকসান গুণতে গুণতে বর্তমানে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবার মতো পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
ইউরোপের অন্যান্য বাংলাদেশি অধ্যুষিত দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়ামেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু শহরে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে ৪ মাস একটানা লোকসান গুণে অনেকে মূলধন হারিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে করোনা সংক্রমণকালীন ২ মাস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। মহামারি সংকট প্রাথমিকভাবে কেটে যাবার পরও আগের স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরার কারণে, বর্তমানে নিজের জমানো টাকা খরচ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। বাকি পড়ে যাচ্ছে মোটা অংকর দোকান ভাড়াসহ সরকারের ট্যাক্সের টাকা ও কর্মচারীর বেতন। বড় ধরনের লোকসান গুণেও বর্তমান সময় পর্যন্ত যারা টিকে আছেন, তারা ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন। ব্যবসার ভরা মৌসুমে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ইউরোপের বিখ্যাত শহরগুলো পর্যটনশূন্য এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাবিহীন।
ইউরোপের বিভিন্ন বড় শহরে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারির সংক্রমণে প্রায় কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই লকডাউনের কারণে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয় তাদের। কিন্তু পুনরায় এখন খোলার পরেও অনেক ব্যবসায়ীর বিক্রি কমে গেছে শতকরা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। বর্তমানের বিক্রি দিয়ে ব্যবসার আনুষঙ্গিক খরচের এক তৃতীয়াংশও পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে লকডাউনের সময় অনেক শহরে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দোকান, ফলের দোকানসহ তৈরি খাবার হোমডেলিভারির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো হয় বলে জানা গেছে। যদিও বর্তমানে ইউরোপজুড়ে চলা অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন অনেক ব্যবসায়ী।
ইতালিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করলে দেশটিতে বসবাস করা প্রায় দেড় লক্ষাধিক বাংলাদেশি সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েন। চাকরিজীবীদের জন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি সহযোগিতা অপ্রতুল থাকায় তারা সংকটে পড়েন। ইতালির রোম, ভ্যানিস, ফ্লোরেন্স শহর বর্তমানে পর্যটনশূন্য হওয়ায় পর্যটননির্ভর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন এবং অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতালিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ছাড়া সাইবার ক্যাফে, মোবাইল ফোনের দোকান, মানি ট্রান্সফার, ভ্রাম্যমাণ তৈরি পোশাকের দোকান, এমন ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত।
স্পেনে করোনা মহামারির তীব্রতা শুরু হলে মার্চের মাঝামাঝিতে জরুরি রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারি করা হয়। তখন প্রয়োজনীয় খাদ্যের দোকান ও ফলের দোকান ছাড়া কফিশপ, রেস্টুরেন্ট, মানি ট্রান্সফারসহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ বন্ধ করে দিতে হয়। স্পেনে প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ রাজধানী মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় বসবাস করেন। এই দুটো শহরই পর্যটননির্ভর হওয়ায় বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পর্যটননির্ভর। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক বেশি।
সেখানে ব্যবসায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানায়, গত ৩ মাসে তিনি ২ লাখ ইউরোর ক্ষতির শিকার হন এবং এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তার ৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।